শুক্রবার, ১৯ আগস্ট, ২০১৬

ইরান-রাশিয়ার সাথে তুরস্কের জোটে চিন্তিত যুক্তরাষ্ট্র



রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কিছুদিন আগে এক বিবৃতিতে জানিয়েছিল তাদের জঙ্গি-বিমানগুলো ইরানের বিমান ঘাঁটি ব্যবহার করে সিরিয়ায় আইএস ও আন্‌ নুসরা সন্ত্রাসীদের অবস্থানের ওপর হামলা চালিয়েছে।
এ ব্যাপারে এক প্রতিক্রিয়ায় মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মার্ক টোনার দাবি করেছেন, রুশ বিমান বাহিনীর ইরানের বিমান ঘাঁটি ব্যবহারের বিষয়টি জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদের ২২৩১ নম্বর প্রস্তাবের লঙ্ঘন। তবে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন। প্রায় এক বছর আগে রাশিয়া সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আইএসের ওপর হামলা শুরু করে। গত বছর ‌১ অক্টোবর কাস্পিয়ান সাগরে মোতায়েন যুদ্ধজাহাজ থেকে রাশিয়া সিরিয়ার আইএস গ্রুপের অবস্থানের ওপর ২৬টি দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছিল।
কোনো কোনো রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করেন, ইরান ও রাশিয়ার মধ্যে কৌশলগত সর্বাত্মক সহযোগিতা বজায় রয়েছে এমনটি বলার সময় এখনো আসেনি কিন্তু সিরিয়া সংকটকে কেন্দ্র করে এ দুদেশ একে অপরকে সামরিকসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। বাস্তবতা হচ্ছে, ইরান ও রাশিয়া এ অঞ্চলে বিশেষ করে সিরিয়ায় তাদের অভিন্ন হুমকির বিষয়টি উপলব্ধি করতে পেরেছে এবং এটাই তাদের মধ্যে কৌশলগত সহযোগিতা বিস্তারের অন্যতম কারণ। তবে সিরিয়া ইস্যুতে তেহরান-মস্কোর এ সামরিক সহযোগিতাকে সর্বাত্মক ও ব্যাপকমাত্রায় সহযোগিতা বলা যাবে না। কারণ ইসরাইলের সঙ্গে ফিলিস্তিনিদের আপস আলোচনা কিংবা কাস্পিয়ান সাগরের অধিকার ভাগাভাগি নিয়ে এখনো রাশিয়ার সঙ্গে ইরানের মতবিরোধ চলছে। এ ছাড়া, দক্ষিণ ককেশিয় অঞ্চলের ঘটনাবলীতেও বিশেষ করে কারাবাগ এলাকা নিয়ে শান্তি আলোচনায় ইরানের সরাসরি কোনো উপস্থিতি নেই। মিনস্ক গ্রুপেও ইরান ও রাশিয়ার মধ্যে সহযোগিতা লক্ষ্য করা যায় না। তবে এসব মতবিরোধের ঊর্ধ্বে উঠে এ দুই দেশ আইএসের মতো ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসীদের মোকাবেলায় ঐক্যবদ্ধ হয়েছে।
ইরানের নীতি নির্ধারণী পরিষদের গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান ড. আলী আকবর বেলায়েতি গতকাল (বুধবার) তেহরানে অস্ট্রিয়ার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও উপ-চ্যান্সেলর মাইকেল অ্যাস্পিন্ডেলকে দেয়া সাক্ষাতে বলেছেন, প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ইরান ও রাশিয়ার সহযোগিতা অপ্রত্যাশিত কিছু নয়। তিনি বলেন, সন্ত্রাসীদের মোকাবেলায় ইরান ও রাশিয়ার কৌশলগত সহযোগিতার প্রয়োজন রয়েছে। বেলায়েতি আরো বলেছেন, ইরান রাশিয়ার সঙ্গে প্রতিরক্ষা ছাড়াও আর্থ-রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও সহযোগিতাকে গুরুত্ব দিচ্ছে। এদিকে, ইরানের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সচিব আলী শামখানিও বলেছেন, সিরিয়ায় দায়েশ সন্ত্রাসীদের মোকাবেলার জন্য ইরান ও রাশিয়ার সহযোগিতা কৌশলগত।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সন্ত্রাসীদের মোকাবেলার লক্ষ্যে ইরান ও রাশিয়ার মধ্যে সামরিক ও গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় ক্ষেত্রে সহযোগিতা বজায় রয়েছে। কিন্তু আমেরিকা ও ইসরাইল এ ব্যাপারে তীব্র নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। তারা ইরান ও রাশিয়ার সহযোগিতাকে ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করছে। কারণ ইসরাইল ও আমেরিকা তেহরান-মস্কোর সহযোগিতার গুরুত্ব খুব ভালোভাবেই উপলব্ধি করতে পেরেছে। তারা জানে তেহরান-মস্কোর সহযোগিতা মধ্যপ্রাচ্যসহ সারা বিশ্বের রাজনীতিতে বিরাট পরিবর্তন ঘটাবে।
এদিকে, ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর তুরস্ক সফরের পর কেউ কেউ সিরিয়া সমস্যা সমাধানের জন্য ইরান, রাশিয়া ও তুরস্কের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় জোট গঠনের সম্ভাবনার কথা বলছেন। এসব ঘটনা আমেরিকা এবং সৌদি আরবের জন্য অশনি সংকেত বলে মনে করছেন অনেকে। বর্তমানে তুরস্ক সরকার পাশ্চাত্য ঘেঁষা নীতি থেকে অনেকটাই সরে এসেছে এবং দেশটির প্রেসিডেন্ট এরদোগান শান্তিপূর্ণ উপায়ে সিরিয়া সমস্যা সমাধানের কথা বলছেন।
যাইহোক বিশ্লেষকরা বলছেন, আঞ্চলিক রাজনীতিতে এ পরিবর্তন একেবারেই অপ্রত্যাশিত ছিল এবং আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেবে তা বলা কঠিন।