বৃহস্পতিবার, ৩০ জুলাই, ২০১৫

আয়-ব্যয়ের হিসাব দিতে পারছে না বড় দুদলই

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কাছে আয়-ব্যয়ের হিসাব দিতে পারছে না দেশের বড় দুটি দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। সময় শেষ হওয়ার একদিন আগে আজ বৃহস্পতিবার বাড়তি সময় চেয়েছে দুই দলই।
নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে আগের পঞ্জিকা বছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব ইসির কাছে জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা আছে। তবে আজ ৩০ জুলাই পর্যন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়নি আওয়ামী লীগ ও বিএনপি।
বাড়তি সময় চেয়ে আবেদনের পর কমিশন আওয়ামী লীগকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সময় দিয়েছে। অন্যদিকে বিএনপি সময় চেয়েছে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এ ব্যাপারে কমিশন থেকে এখন পর্যন্ত তাদের কিছু জানানো হয়নি।
গত বছর বিএনপি কমিশনে প্রতিবেদন জমা দেয় ১৪ আগস্ট। এবার সময় বাড়ানোর আবেদন প্রসঙ্গে বিএনপির সহ দপ্তর সম্পাদক আসাদুল করিম প্রথম আলোকে বলেন, সোমবার দলের পক্ষ থেকে সময় চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। সময় চাওয়ার বিষয়টি নিয়মের মধ্যেই আছে। এর আগে রমজান ও ঈদের ব্যস্ততা ছিল। বর্তমানে দলের মহাসচিব চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে আছেন। প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য মহাসচিবের সই প্রয়োজন। সব মিলিয়ে দলের পক্ষ থেকে সময় চাওয়া হয়েছে। কমিশন এখন পর্যন্ত কিছু জানায়নি।
২০০৮ সালের রাজনৈতিক দল নিবন্ধন বিধিমালার ৯ (খ) তে নিবন্ধনের শর্ত পরিপালন সম্পর্কে কমিশনকে অবহিতকরণ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, প্রতিবছরের ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোকে আগের পঞ্জিকা বছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব জমা দিতে হবে। একটি রেজিস্টার্ড চার্টার্ড অ্যাকাউন্টিং ফার্মের মাধ্যমে অডিট করে অডিট প্রতিবেদনের কপি কমিশনে দাখিল করতে হবে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন বাতিল হওয়া প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, কোনো দল পরপর তিনবার কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী কোনো তথ্য সরবরাহ না করলে সেই দলের নিবন্ধন বাতিল করতে পারে কমিশন।
কমিশনের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো কমিশনের কাছে আয়-ব্যয়ের প্রতিবেদন দাখিল করতে আইনগতভাবে বাধ্য। তবে প্রতিবারের মতো এবারও প্রধান দুটি দলসহ বেশ কিছু দল সময় বাড়ানোর আবেদন করেছে। আইনে সময় বাড়ানোর কথা বলা নেই। তবে বিষয়টি কমিশনের এখতিয়ারে আছে। কমিশন বিভিন্ন বিষয় বিচার বিশ্লেষণ করে সময় বাড়ায়। এবারও সময় বাড়িয়েছে। আওয়ামী লীগকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সময় বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। কাল ৩১ জুলাই শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় বিষয়টি হয়তো বিবেচনা করবে কমিশন।
কমিশনে খোঁজ নিয়ে আজ বিকেল পর্যন্ত কমিশনের নিবন্ধিত ৪০টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে মোট ৩১টি দলের অবস্থান সম্পর্কে জানা গেছে। কমিশনও অন্য দলগুলোর অবস্থান জানে না বলে জানালেন আরেকজন কর্মকর্তা।
কমিশনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বড় দুইটি দলের পাশাপাশি জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট (মুক্তিজোট), ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন এবং বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ কমিশনের কাছে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য সময় চেয়েছে। তবে কমিশন আওয়ামী লীগ ছাড়া আর কয়টি দলের আবেদনে সময় বাড়িয়েছে সে তথ্য পাওয়া যায়নি।
আজ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বাংলাদেশ মুসলিম লীগ-বিএমএল, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), জাতীয় পার্টি (জেপি), প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল-পিডিপি, খেলাফত মজলিস, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, জাতীয় পার্টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বি জে পি, গণফ্রন্ট, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, জাকের পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (এম এল), ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ ইসির কাছে দলের আয়-ব্যয়ের হিসাব জমা দিয়েছে।