বৃহস্পতিবার, ৩০ জুলাই, ২০১৫

ইনিংস বড় হচ্ছে না বাংলাদেশের

৩০,৪০, ৩৫,৩৫—এই চারটি সংখ্যা ঢাকা টেস্টের প্রথম দিনে বাংলাদেশের শীর্ষ চার ব্যাটসম্যানের ব্যক্তিগত স্কোর। ইমরুল কায়েস, মুমিনুল হক, মাহমুদউল্লাহ ও সাকিব আল হাসান—এই চারজনই আজ নিজেদের ইনিংসের শক্তি ভিত্তি গড়ে তুলেছিলেন। উইকেটে জমে গিয়েছিলেন দারুণভাবেই। দক্ষিণ আফ্রিকান বোলারদের বিপক্ষে বুক চিতিয়ে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এই চারজনই। কিন্তু চারজনই কেন যেন তাঁদের ব্যক্তিগত ইনিংস বড় করতে পারেননি। নিজেদের আরও মেলে ধরার সময়ই এঁরা চারজনই বিদায় নিয়েছেন দলকে বিপদে ফেলে দিয়ে।
এই চারটি সংখ্যার সঙ্গে অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের ব্যক্তিগত সংগ্রহ ৬৫-কেও নিয়ে আসুন। মুশফিকুর রহিমও ছিলেন বড় ইনিংস গড়ার পথেই। তিনিও ব্যর্থ হয়েছেন। তাঁর আউটের সিদ্ধান্তটি নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে। কিন্তু তারপরেও তো তিনি আউট। বড় সংগ্রহ না গড়েই আউট। সেট ব্যাটসম্যানদের অসময়ে বিদায় নেওয়ার এই প্রবণতা আজ ঢাকা টেস্টের প্রথম দিনটাকে আক্ষেপের একটা দিনেই পরিণত করে দিল। প্রোটিয়া বোলারদের চাপে ফেলার সুযোগটা যেখানে ছিল, সেখানে ৮৮.১ ওভার খেলে ২৪৬ রানেই ৮ উইকেট হারিয়ে উল্টো দ্রুত গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় বাংলাদেশ দল।
ডেল স্টেইন আর জেপি ডুমিনি দুজন মিলেনই আজ ভেঙেছেন বাংলাদেশের মেরুদণ্ড। কিন্তু স্টেইনের আধিপত্যটা মেনে নেওয়া গেলেও ডুমিনির প্রভাবটা কিন্তু ঠিক মেনে নেওয়া যাচ্ছে না। ঠিক যেমন মানা যাচ্ছে না ডিন এলগারকে উইকেট উপহার দেওয়ার ব্যাপারটি। আট উইকেটের মধ্যে কতটি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের কাছ থেকে প্রোটিয়া বোলাররা উপহার পেয়েছেন, তার একটি তাত্ত্বিক হিসাবও নেওয়া যেতে পারে।
দিনের শুরুতেই স্টেইনের অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের একটি বল তাড়া করে নিজের উইকেটটি বিলিয়ে দিয়ে আসেন তামিম ইকবাল। এই উইকেটেই ‘ক্লাব ৪০০ ’র গর্বের জায়গাটা নিজের করে ফেলেন এই প্রোটিয়া ফাস্ট বোলার। এরপর মুমিনুল, ইমরুল, মাহমুদউল্লাহ, সাকিব, লিটন—আউটগুলো দেখে মনেই হয়নি যে এগুলো পেতে খুব একটা পরিশ্রম করতে হয়েছে প্রোটিয়া বোলারদের।
তামিমের বিদায়ের পর দ্বিতীয় উইকেটে দারুণ একটা জুটি গড়েছিলেন মুমিনুল হক ও ইমরুল কায়েস। ৬৯ রানের এই জুটিটি মধ্যাহ্ন বিরতির ঠিক পরপরই ভেঙে যায় মুমিনুলের ফেরায়। ডুমিনির অফ স্টাম্পের বাইরের ওই বলটি খোঁচা যদি মুমিনুল না দিতেন, তাহলে নিজের ৪০ রানের ইনিংসটি বড় হতেই পারত। ডুমিনির উইকেট সোজা ধেয়ে আসা একটি বলে ইমরুল এলবির ফাঁদে পড়লেন ব্যক্তিগত ৩০ রানে। সেট হয়ে যাওয়ার পর ওই ঢংয়ে ফেরাটা যেকোনো শীর্ষ পর্যায়ের ব্যাটসম্যানের ক্ষেত্রে দৃষ্টিকটু। সাজঘরে ফিরে এ ব্যাপারে নিশ্চয়ই কোচের কথা শুনতে হয়েছে তাঁকে। চট্টগ্রামেও নিজের ইনিংসটি এমন পর্যায়েই থেমে যেতে দেখেছেন ইমরুল। ব্যাপারটি নিয়ে অবশ্যই তাঁর কাজ করার অনেক কিছু আছে।
মুশফিকুর রহিম আর মাহমুদউল্লাহর জুটিটি আধিপত্য ছড়িয়েছিল প্রোটিয়াদের ওপর। ৩৫ রানে স্টেইনের কিছুটা রিভার্স হয়ে যাওয়া বলে ফ্লিক খেলে নিজের সর্বনাশ ডেকে আনেন তিনি। শর্ট মিড উইকেটে ডেম্বা বাভুমার উপস্থিতি কী বেমালুম চোখ এড়িয়ে গিয়েছিল মাহমুদউল্লাহর? সাকিবও ফিরলেন মরকেলের বলে পুরোপুরি সেট হয়ে। লিটন ডুমিনিকে তাঁর তৃতীয় উইকেটটি যেভাবে উপহার দিলেন, তার ফুটেজ দেখে তিনি নিশ্চয়ই লজ্জা পেয়ে যাবেন।
মুশফিকুর রহিম নিজেকে দুর্ভাগ্য ভাবতেই পারেন। দুর্ভাগ্য অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমেরও। দারুণ ব্যাট করছিলেন তিনি। দীর্ঘ রান খরার পর আজ রানের বৃষ্টিতে ভিজছিলেন বাংলাদেশের ‘লিটল মাস্টার।’ কিন্তু ৬৫ রানে উইকেটের পেছনে ধরা পড়লেন তিনি ডিন এলগারের বলে। নিজের আউটের রিভিউও চেয়েছিলেন তিনি। বলটি মুশফিকের গ্লাভস বা ব্যাট ছুঁয়ে বাঁক খেয়ে উইকেট রক্ষকের কাছে গেছে কিনা, রিভিউয়ে দেখার বিষয় ছিল ওটাই। দীর্ঘক্ষণ বিভিন্ন অ্যাঙ্গেল থেকে দেখেও তৃতীয় আম্পায়ার খুব যে স্থির সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পেরেছেন, তা কিন্তু বলা যায় না। কিন্তু তারপরেও তিনি আউট। তৃতীয় আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে মুশফিকুর রহিম যে খুব খুশি হয়েছেন-এ কথা কিন্তু বলা যায় না।
তাইজুলের বদলে দলে জায়গা পাওয়া নাসির হোসেনই এই মুহূর্তে ভরসা হয়ে আছেন বাংলাদেশের জন্য। কাল সকালে যখন নাসির মাঠে নামবেন আবার তখন সঙ্গী হিসেবে পাবেন মুস্তাফিজুর রহমান ও জুবায়ের হোসেনকে। এই দুজনকে নিয়ে নাসির দলকে কতটা টেনে নিয়ে যেতে পারেন, দেখার বিষয় এখন এটিই।