১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮১।
এই দিনটাতেই অস্ট্রেলিয়ার চ্যাপেল ভাইদের
কল্যানে ক্রিকেট বিশ্ব
দেখেছিল তার ইতিহাসের সবচেয়ে
ন্যাক্কারজনক ঘটনা। ট্রেভর
চ্যাপেলের ‘আন্ডার আর্ম
ডেলিভারি’তে গোটা
বিশ্ব জুড়েই ছি:
ছি: রব উঠেছিল।
এর ঠিক ৩৫ বছর পর একই রকম একটা ন্যাক্কারজনক ঘটনার মঞ্চায়ন হল চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে।
এর ঠিক ৩৫ বছর পর একই রকম একটা ন্যাক্কারজনক ঘটনার মঞ্চায়ন হল চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে।
ক্রিকেট ইতিহাসের ‘নিকৃষ্টতম’ নজির
দেখিয়ে জিম্বাবুয়ের হাতের
মুঠোয় থাকা ম্যাচ
ছিনিয়ে নিয়ে গেলো
ওয়েস্ট ইন্ডিজ। অদ্ভুত
এবং কলঙ্গজনক এই
আউটের শিকার হয়ে
৫০ তম ওভারের
শেষ বলে যখন
জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যান সাজঘরে
ফিরে যান, জয়
থেকে তখন মাত্র
তিন রান দূরে
জিম্বাবুয়ে। ভিনু মানকাড
হয়ে ভিলেন বনে
গেলেন শ্যামার স্প্রিঙ্গার; আর
বিল ব্রাউনের মত
ট্র্যাজিক হিরো হলেন
রিচার্ড নাগাভারা।
ক্রিকেটের পরিভাষায় এই
আউটগুলোকে বলা হয়
‘মানকাডেড’।
কেন এই নাম?
– এর পেছনেও আছে
একটা ঘটনা।
১৯৪৭ সালে সেবার অস্ট্রেলিয়া সফরে গিয়ে ভারতের ভিনু মানকড় প্রস্তুতি ম্যাচ ও পরে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে মোট দু’বার অস্ট্রেলিয়ার বিল ব্রাউনকে এভাবে আউট করেছিলেন। এ কারণেই এই আ উটের এমন নাম। টেস্ট আর ওয়ানডে মিলিয়ে যে আউট হয়েছে মাত্র আটবার।
সর্বশেষ এই ঘটনা ঘটে ২০১৪ সালে। ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যান জশ বাটলারকে সেবার আউট করেছিলেন শ্রীলঙ্কার সচিত্র সেনানায়েকে।
১৯৪৭ সালে সেবার অস্ট্রেলিয়া সফরে গিয়ে ভারতের ভিনু মানকড় প্রস্তুতি ম্যাচ ও পরে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে মোট দু’বার অস্ট্রেলিয়ার বিল ব্রাউনকে এভাবে আউট করেছিলেন। এ কারণেই এই আ উটের এমন নাম। টেস্ট আর ওয়ানডে মিলিয়ে যে আউট হয়েছে মাত্র আটবার।
সর্বশেষ এই ঘটনা ঘটে ২০১৪ সালে। ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যান জশ বাটলারকে সেবার আউট করেছিলেন শ্রীলঙ্কার সচিত্র সেনানায়েকে।
যে জিতবে, সেই
শেষ আটের টিকেট
পাবে - মঙ্গলবার জিম্বাবুয়ে ও
ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যকার ম্যাচটি দু’দলের কাছেই
তাই ছিলো গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু
কে জানতো, ম্যাচটি কলঙ্ক
হয়ে থাকবে ওয়েস্ট
ইন্ডিজের জন্য!
কিন্তু দিন শেষে
হাসিটা হাসলো ওয়েস্ট
ইন্ডিজ। উত্তেজনায় ভরা
ম্যাচে, জয়টা নিজেদের দিকেই
ঝুলিয়ে রেখেছিলো জিম্বাবুয়ে। শেষদিকে পরপর
দুটি উইকেট হারানোর পর
জয়ের জন্য ছয়
বলে প্রয়োজন ছিলো
তিন রান। কিন্তু
ওভারের শেষ বলে
বোলার কেমো পল
রান আউট করেন
নন স্ট্রাইকে থাকা
রিচার্ড নাগভারাকে।
সাধারণ কোন রানআউট
সেটা ছিলো না।
বোলার পল শুরু
থেকেই খেয়াল করছিলেন বল
ডেলিভারির দেওয়ার আগেই
রান নেওয়ার জন্য
ছুটছেন নাগারাভা। শেষ
বলে তাই সুযোগটা নিলেন;
অনেকটা নিরস্ত্র মানুষকে পেছন
থেকে ছুড়ি চালানোর মত।
বল ছোঁড়ার আগেই
বোলিং প্রান্তে এসে
ধীরলয়ে ভেঙে দিলেন
স্ট্যাম্প; রান আউট
করলেন নিজের দিকে
থাকা ব্যাটসম্যানকে। 'অখেলোয়াড়' সুলভ
আচরণে কলঙ্কিত হলো
ওয়েস্ট ইন্ডিজ যুব
দল।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ
স্টেডিয়ামে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দেওয়া
২২৭ রানের লক্ষ্যে খেলতে
নেমে শুরুটা ভালো
হয়নি জিম্বাবুয়ের। ৪৬
রানেই ব্রেন্ডন স্লাই
আর রায়ান মুরাইকে হারিয়ে
খানিকটা বিপাকে পড়ে
আফ্রিকার দলটি। তবে
দলকে দারুণভাবে এগিয়ে
নিচ্ছিলেন ওপেনার শন
শিনডার (৫২)।
কিন্তু দলীয় ৯৭
রানে তিনি ফিরলে
জেরিমি ইভস আর
উইলিয়াম ম্যাশিঙ্গে দলের
হাল ধরেন। অন্যদিকে, বল
হাতে একাই তোপ
দেগে চলছিলেন আলজারি
জোসেফ। ম্যাশিঙ্গের উইকেটটিও নেন
তিনি। মাত্র দুই
রানের ব্যবধানে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে
পড়ে ফিরতে হয়
ইভসকেও। এরপর নিয়মিত
বিরতীতে উইকেট হারাতে
থাকে জিম্বাবুয়ে। ১৪৩-১৪৭ এর
মধ্যে তিনটি উইকেট
হারায় হ্যামিল্টন মাসাকাদজা-এলটন
চিগুম্বুরাদের
উত্তরসূরিরা।
অ্যাডাম কাফি আর
উইসলি মাদিভারের ব্যাটে
আবারো পথ খুঁজে
পায় তাঁরা। এই
জুটি থেকে আসে
১১২ রানের জুটি।
এবার জয়ের স্বপ্ন
দেখা শুরু করে
জিম্বাবুয়ে। কাফি ৪৩
রানে স্প্রিঙ্গারের বলে
এলবিডব্লিউয়ের
ফাঁদে পড়ে ফিরে
গেলে আবারো শুরু
হয় আসা-যাওয়ার
মিছিল। ২১৭ রানে
মাদিভারে ও মাগারিরা আউট
হলে বিপাকে জিম্বাবুয়ে। শুরু
হয় টানটান উত্তেজনা। ৪৯
তম ওভারের শেষ
বলে জয়ের জন্য
দরকার ছিলো তিনরান। স্ট্রাইকে ছিলেন
কুনদাই মাতিকিমু, অপর
পাশে রিচার্ড নাগারাভা। শেষ
বল ছোঁড়ার আগেই
রান আউট করলেন
নিজের দিকে থাকা
ব্যাটসম্যান নাগারাভাকে। তারপর
উল্লাস।
ওদিকে তখনও আউটের
সিদ্ধান্ত দেননি আম্পায়ার। সহায়তা
চাইলেন থার্ড আম্পায়ারের কাছে।
তার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, রান
আউট নাগারাভা। ফলে,
সতর্কতার কারণেই হার
মানতে হলো জিম্বাবুয়েকে।
২ রানের জয়
পেলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বল
হাতে জোসেফ একাই
চারটি উইকেট তুলে
নিয়েছেন। শ্যামার স্প্রিঙ্গার নিয়েছেন দুইটি
উইকেট।
এর আগে টসে
হেরে আগে ব্যাট
করতে নেমে নয়
উইকেটে ২২৬ রান
তোলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দলের
হয়ে সর্বোচ্চ ৬১
রানের ইনিংস খেলেন
শ্যামার স্প্রিঙ্গার। টেভেইন
ইমলাক ৩১ ও
ওপেনার গিরডন পোপ
৩০ রান করেন।
জিম্বাবুয়ের রুগারে মাগিররা তিনটি
উইকেট নিয়েছেন।
হারের দ্বারপ্রান্ত থেকে
ফিরে ক্যারিবিয়ানদের উচ্ছ্বাসটাও ছিলো
দেখার মতোই। তবে,
নি:সন্দেহে ম্যাচটা তাদের
এই নাটকীয় জয়ের
জন্য নয়, বরং
তাদের ‘অখেলোয়ারসুলভ’ আচরণের
জন্যই ইতিহাসের পাতায়
লেখা হয়ে থাকবে।
আর জিম্বাবুয়ে?
শুধুমাত্র সান্ত্বনা ছাড়া
আর কিছুই যে
এখন পাবার নেই
তাদের। মাত্র ২
রানের এই আক্ষেপই যে
পোড়াবে অনেকদিন।