রবিবার, ৪ অক্টোবর, ২০১৫

শিক্ষকের হাত-পা ভেঙ্গে দেয়ার হুমকি দিলেন রাবি ছাত্রলীগ নেতা মুন

বিধি বর্হিভূতভাবে যোগ্যতা ছাড়াই ভর্তির দায়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সিটিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজ (আইবিএস) থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন মুনের ভর্তি বাতিল করেছে কর্তৃপক্ষ। নিয়ম অনুযায়ী আইবিএস’র ফেলো থাকা অবস্থায় তার নামে বরাদ্দকৃত ফ্যামিলি বাসা ছাড়ার নির্দেশ দেয় র্কতৃপক্ষ। কিন্তু নির্দেশিত সময়ের মধ্যেও বাসা খালি না করে উল্টে ওয়ার্ডেনকে বিভিন্নভাবে হুমকি-ধামকি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে ওই ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে। এদিকে এ ঘটনার ফলে নিরাপত্তার স্বার্থে নগরীর মতিহার থানায় একটি জিডি করেছে বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
জানা যায়, যোগ্যতা ছাড়াই বিধি বর্হিভূতভাবে ভর্তির দায়ে গত ২৯ আগস্ট আইবিএস থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন মুনের ভর্তি বাতিল করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী আইবিএস’র ফেলো থাকা অবস্থায় তার নামে বরাদ্দকৃত ফ্যামিলি স্যুট ‘সি’ বাসার বকেয়া পরিশোধ করে ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বাসা ছাড়ার নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু নির্দেশিত সময়ের মধ্যেও বাসা খালি না করায় তাকে ৩০ সেপ্টেম্বর বাসা খালি করার শেষ সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়।
এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে ছাত্রলীগের সাবেক এই নেতা ১৫ সেপ্টেম্বরের আগে থেকেই আইবিএস’র হোস্টেলের ওয়ার্ডেন সহকারী অধ্যাপক ড. মো. কামারুজ্জামানকে বিভিন্ন মাধ্যমে মারধরের হুমকি দিয়ে আসছিলেন। একপর্যায়ে গত ১৭ সেপ্টেম্বর সকালে ওয়ার্ডেনের এক সহকারী কর্মকর্তাকে হুমকি-ধামকি দিয়ে অফিসিয়াল বিভিন্ন কাগজপত্র জোর করে নিয়ে যেতে চান তিনি। এসময় ওই কর্মকর্তা ওয়ার্ডেন ড. কামারুজ্জামানকে বিষয়টি জানালে তিনি অফিসে আসেন। এসময় ছাত্রলীগের ওই নেতা কামারুজ্জামানকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। তার ভর্তি বাতিলে কামারুজ্জামানের হাত আছে উল্লেখ করে তাকে মারধরের হুমকি দিয়ে চলে যান। পরে ১৮ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ১০টার দিকে কামারুজ্জামানের বাসার সামনে তাকে উদ্দেশ্য করে উচ্চস্বরে গালিগালাজ শুরু করে মুন। এসময় মোবাইলে ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী দিয়ে তার হাত-পা ভেঙে গুড়িয়ে দেয়ার নির্দেশ দেন তিনি। এতে কামারুজ্জামান ও তার পরিবার চরম নিরপত্তাহীনতায় ভুগছেন উল্লেখ করে গত ১৯ সেপ্টেম্বর আইবিএস-এর পরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন তিনি। ওই অভিযোগ পত্রে কামারুজ্জামানের গত কয়েকদিন ধরে ধারাবাহিক এসব হুমকি-ধামকির বর্ণনা দিয়েছেন। এতে তিনি আরো উল্লেখ করেছেন, ‘ইব্রাহিম হোসেন মুনের ধারাবাহিক হুমকি-ধামকিতে আমি ও আমার পরিবার বিপর্যস্ত। ইতোমধ্যেই আর দুই সন্তানকে স্কুলে পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছি।’
এছাড়া আইবিএস-এর ওই বাসায় থাকাকালীন সময়ে ২০১৪ সালের ডিসেম্বর থেকে এ বছরের আগস্ট পর্যন্ত মোট ৯ মাসের ভাড়া বকেয়া রয়েছে মুনের। ২০১৪ সালের এপ্রিল থেকে এ বছরের আগস্ট পর্যন্ত ১৭ মাসের সকল বৈদু্যুতিক বিলও পরিশোধ করেননি তিনি।
এদিকে এ ঘটনায় পর ভুক্তভোগী ওই শিক্ষক ও তার পরিবারের সদস্যরা বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে নিরাপত্তা চান। এর পেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড.এন্তাজুল হক গত ২২ সেপ্টেম্বর দুপুরে নগরীর মতিহার থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন।
এ ব্যাপারে আইবিএস-এর পরিচালক ড. স্বরোচিষ সরকার বলেন, ড. কামারুজ্জামানের লিখিত অভিযোগটি আমি যাচাই-বাছাই করে ওই দিনই সুপারিশসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করেছি।
জানতে চাইলে ছাত্রলীগে সাবেক সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন মুন বলেন, আমার বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে এই ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। আমি রাজশাহীর বাইরে থাকায় ভাড়া পরিশোধ করতে দেরী হয়েছে। হুমকির বিষয়টিও অস্বীকার করেন তিনি। এছাড়া তিনি বলেন, অবৈধভাবে আমার ভর্তি বাতিল করেছে, আমি আইনে লড়াই চালিয়ে যাব।
প্রসঙ্গত, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা মুন ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষে এমফিল ডিগ্রী নেওয়ার জন্য রাবির আইবিএসে ভর্তি হন। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী তার ভর্তির যোগ্যতা না থাকলেও তৎকালীন ভিসি প্রফেসর আব্দুস সোবহান একক সিদ্ধান্তে নিয়ম বহির্ভূতভাবে তাকে ভর্তি করার নির্দেশ দেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বিষয়টি বর্তমান প্রশাসন অবহিত হওয়ার পর সম্প্রতি একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্ত কমিটি মুনের ভর্তির যোগ্যতা না থাকার বিষয়টি প্রমাণ পাওয়ায় গত ২৪ আগস্ট ২৩৮ তম শিক্ষা পরিষদে তার ভর্তি বাতিলের সুপারিশ করে। এরই ভিত্তিতে ২৯ আগস্ট ৪৬১ তম সিন্ডিকেটের সভায় তার ভর্তি বাতিলের বিষয়টি চুড়ান্ত অনুমোদন হয়।

শিক্ষার্থীদের বাড়তি নিরাপত্তা
এক সপ্তাহের মধ্যে দুই বিদেশী নাগরিক দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত হওয়ায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসা বিদেশী শিক্ষার্থীদের বাড়তি নিরাপত্তায় সতর্ক রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে শনিবার দুপুরে বিশ^বিদ্যালয় সংগলœ মতিহার থানা পুলিশকে অবহিত করেছে প্রশাসন। বিদেশী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার দিক বিবেচনা করে তাদেরকে একা চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর দফতর থেকে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক বিভাগ ও ইনস্টিটিউটে মোট পাঁচজন বিদেশী শিক্ষার্থী ও গবেষক রয়েছেন। তারা হলেন, ইনস্টিটিউট অব বায়োলজিক্যাল সায়েন্সেস’র সহকারী গবেষক জাপানি নাগরিক কেনজি সুজি, নাট্যকলা ও সঙ্গীত বিভাগের গবেষক ভারতীয় নাগরিক শতাব্দি আচার্য, ফলিত পদার্থবিজ্ঞান ও ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের নেপালী জিলানী আনসারী, কম্পিউটার সায়েন্স এ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের নেপালী বসন্ত রাজ গিরি, এনিম্যাল হাজবেন্ড্রারি এ্যান্ড ভেটেরেনারি সায়েন্স বিভাগের শিক্ষার্খী রনজিৎ মল্লিক। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মীর আব্দুল কাউয়ূম ইন্টারন্যাশনাল ডরমেটরিতে রয়েছেন।
জানতে চাইলে ছাত্র উপদেষ্ঠা ছাদেকুল আরেফিন মাতিন বলেন, ‘বিদেশী নাগরিক খুন হওয়ার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসা শিক্ষার্থী ও গবেষকদের নিরাপত্তা নিয়ে আমরা সতর্ক রয়েছি। যে কোনো প্রয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সথে যোগাযোগ করতেও তাদের বলা হয়েছে।’
নগরীর মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ূন কবির বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচজন বিদেশী শিক্ষার্থী ও গবেষকের তালিকা আমরা পেয়েছি। তাদের নিরাপত্তা দিতে পুলিশ সতর্ক রয়েছে।’

সমাজকর্ম বিভাগের সভাপতি ছাদেকুল
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগে নতুন সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ছাদেকুল আরেফিন। আগামী তিন বছরের জন্য ১ অক্টোবর থেকে তিনি এ দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এর আগে ওই বিভাগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন বিভাগের অধ্যাপক শর্মিষ্ঠা রায়।
নতুন দায়িত্ব নেওয়ার পর সমাজকর্ম বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. ছাদেকুল আরেফিন বলেন, ‘৭৩-এর আইন অনুযায়ী বিভাগের অধ্যাপকদের মধ্যে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে আমাকে এ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বিভাগের একাডেমিক বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে আমি এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছি’।
অধ্যাপক ড. মো. ছাদেকুল আরেফিন বর্তমানে ওই বিভাগের সভাপতি ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি ২০১৩ সাল থেকে রাবির ছাত্র উপদেষ্টা হিসেবে, ২০১৪ সাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য, ২০১৩ সাল থেকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।