মঙ্গলবার, ৬ অক্টোবর, ২০১৫

ঈশ্বরদীতে যাজককে হত্যার চেষ্টা

পাবনার ঈশ্বরদীতে বাড়িতে ঢুকে লুক সরকার (৫০) নামে গির্জার এক যাজককে গলা কেটে হত্যার চেষ্টা করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল সোমবার সকালে উপজেলার বিমানবন্দর সড়কের গোকুলনগর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ দুর্বৃত্তদের একটি মোটরসাইকেল জব্দ করেছে।
লুক সরকার গোকুলনগর এলাকার ব্যাপ্টিস্ট মিশনের ‘ফেইথ বাইবেল চার্চ’-এর যাজক। তাঁর গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরায়। তিনি প্রায় পাঁচ বছর ধরে ঈশ্বরদীর গোকুলনগর স্কুলপাড়ায় এক বাড়িতে সপরিবারে ভাড়া থাকেন। তিনি বাড়িতে হোমিওপ্যাথির চিকিৎসাও করেন।
আহত লুক সরকার, তাঁর পরিবারের সদস্য ও প্রতিবেশীরা প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল সকাল সাড়ে আটটার দিকে মোটরসাইকেলযোগে
তিন যুবক লুক সরকারের বাড়িতে যান। তাঁরা লুক সরকারকে জানান, ধর্মবাণী শুনতে এসেছেন। তিনি তাঁদের বসার ঘরে বসিয়ে বাইবেল থেকে কিছু বাণী পড়ে শোনাতে থাকেন। প্রায় আধা ঘণ্টা এভাবে চলার পর হঠাৎ দুই যুবক বসা থেকে উঠে তাঁর দুই হাত চেপে ধরেন। আরেক যুবক মুখ চেপে গলায় ধারালো অস্ত্র চালাতে থাকেন। তিনি ওই যুবকের হাতের আঙুলে কামড় দিলে যুবক হাত সরিয়ে নেন। তখন তিনি চিৎকার দেন। চিৎকার শুনে পাশের ঘর থেকে তাঁর স্ত্রী ছুটে আসার চেষ্টা করলে যুবকদের একজন ওই ঘরের দরজা বন্ধ করে দেন। তাঁর স্ত্রী ঘরের পেছনে থাকা আরেকটি দরজা দিয়ে বসার ঘরে গিয়ে দেখেন,
তিন যুবক লুক সরকারকে চেপে ধরেছেন, শরীর রক্তাক্ত। তখন তাঁর স্ত্রী চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করলে ওই যুবকেরা দৌড়ে বাইরে চলে যান। তাঁরা মোটরসাইকেল নিয়ে পালানোর চেষ্টা করলে ওই বাড়ির মালিকের গাড়িচালক তাঁদের ধাওয়া দেন। মোটরসাইকেল ফেলে যুবকেরা দৌড়ে একটি চলন্ত ইঞ্জিনচালিত নছিমনে উঠে পালিয়ে যান। রক্তাক্ত অবস্থায় লুক সরকারকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসা শেষে গতকাল রাতে অজ্ঞাতনামা তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন লুক সরকার।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, লুক সরকারের গলার চামড়া কেটে গেছে। গলায় পাঁচ-সাতটি সেলাই দিতে হয়েছে। তবে ক্ষত গভীরে না যাওয়ায় তিনি শঙ্কামুক্ত।
নিজের বাসায় লুক সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ওই যুবকদের প্রত্যেকের বয়স ৩০-এর কাছাকাছি। তাঁদের মধ্যে দুজন গত ১৮ সেপ্টেম্বরও ধর্মবাণী শোনার কথা বলে তাঁর বাড়িতে এসেছিলেন। প্রায় আধঘণ্টা ধর্মবাণী শুনে ওই দিন তাঁরা চুপচাপ চলে যান। তিনি ওই তিনজনের নাম-পরিচয় জানেন না। তবে দেখলে ওই দুজনকে চিনতে পারবেন। কারও সঙ্গে তাঁর শত্রুতা নেই। ওই যুবকেরা কেন এ ঘটনা ঘটিয়েছেন, তা তিনি বুঝতে পারছেন না।
ঈশ্বরদীতে যাজক লুক সরকারকে গতকাল হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত এই মোটরসাইকেলটি ফেলে যায় দুর্বৃত্তরা l প্রথম আলোলুক সরকারের স্ত্রী পদ্মা সরকার বলেন, হোমিওপ্যাথির চিকিৎসার কারণে বাড়িতে সব সময় লোকজনের আনাগোনা থাকে। ওই তিন যুবকও চিকিৎসার জন্য এসেছেন বলে তিনি প্রথমে মনে করেছিলেন।
বাড়ির মালিকের গাড়িচালক সোহেল রানা বলেন, তিনি চিৎকার-চেঁচামেচি শুনে বাড়ির বাইরে এসে দেখেন, তিন যুবক মোটরসাইকেল নিয়ে তড়িঘড়ি করে চলে যাচ্ছেন। তিনি চোর সন্দেহে তাঁদের ধাওয়া করেন। তাঁরা মোটরসাইকেল ফেলে দৌড়ে পালিয়ে যান। দৌড়ানোর সময় এক যুবক পরনে গেঞ্জির নিচে কিছু একটা লুকানোর চেষ্টা করছিলেন। তাঁর ধারণা, সেটি ধারালো অস্ত্র।
পুলিশ জানায়, বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, জব্দ মোটরসাইকেলটি ২০০৮ সালে ঢাকার মহাখালীর তাজউদ্দীন আহমদ সড়ক এলাকার আলালউদ্দিন নামের এক ব্যক্তির নামে নিবন্ধন করা হয়। ঢাকা থেকে ওই ব্যক্তিকে ধরে নিয়ে এসে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কিন্তু ওই ব্যক্তির কোনো মোটরসাইকেলই ছিল না বলে জানা যায়।
পাবনার পুলিশ সুপার আলমগীর কবীর প্রথম আলোকে বলেন, কারা কী কারণে এ হত্যাচেষ্টা চালিয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আরেকজনের নাম ব্যবহার করে মোটরসাইকেলটি নিবন্ধন করা হয়েছে।
ঢাকা ও রংপুরে দুই বিদেশি হত্যার আলোচনার মাঝে এ ঘটনাটিকে কীভাবে দেখছেন প্রশ্ন করলে এসপি বলেন, এটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা।