বৃহস্পতিবার, ৩০ জুলাই, ২০১৫

তাইজুলের জায়গায় নাসির

একটা সময় ব্যাট হাতে ইনিংস ‘ফিনিশ’ করে আসতেন। এখন ভূমিকা কিছুটা বদলেছে। প্রতিপক্ষকে ‘ফিনিশ’ করতে নাসিরের প্রধান অস্ত্র বল। গত কয়েকটা সিরিজে বল হাতে দারুণ সাফল্য পেয়েছেন। তবে সবগুলোই সীমিত ওভারের ম্যাচে। এ বছর এখনো টেস্ট খেলার সুযোগ হয়নি। আগামীকাল দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের শেষ টেস্টে নাসিরের একাদশে থাকার ভালো সম্ভাবনা আছে বলে জানা গেছে টিম ম্যানেজমেন্ট সূত্রে।
আজ সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমও একটি পরিবর্তনের আভাস দিয়েছেন। তবে পরিবর্তনটি কে, সেটি খোলাসা করেননি। আসলে চূড়ান্ত একাদশ আগামীকাল সকালে নির্ধারিত হবে। তবে আপাতত টিম ম্যানেজমেন্ট যেভাবে ভাবছে, তাতে প্রায় এক বছর পর জাতীয় দলের সাদা পোশাক আবার গায়ে চড়তে পারে নাসিরের। সে ক্ষেত্রে একাদশের বাইরে চলে যেতে পারেন তাইজুল ইসলাম।
নাসির নাকি সৌম্য সরকার—এই দোদুল্যমানতার কারণেই নাকি এখনো নিশ্চিত হয়নি একাদশ। আজ টেস্ট অধিনায়ক বলেছেন, ‘আমাদের যেহেতু পাঁচজন স্পিনার আছেই, সে দিক দিয়ে চিন্তা করলে একজন পেসার বা একজন ব্যাটসম্যান সেরা একাদশে ঢুকেও যেতে পারে।’ এ ক্ষেত্রে সৌম্যের প্রবল সম্ভাবনা।
নাসির সর্বশেষ টেস্ট খেলেছেন গত বছরে সেপ্টেম্বরে। বাজে পারফরম্যান্সের কারণে পরে জাতীয় দল থেকেই ছিটকে পড়লেন। বিশ্বকাপ দিয়ে দলে ফিরলেও এ বছর বাংলাদেশের খেলা চার টেস্টের একটিতেও ছিলেন না। তবে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে বোলার হিসেবেও আস্থার একটা জায়গা তৈরি করেছেন। গত আট ওয়ানডেতে পেয়েছেন ৮ উইকেট, ইকোনমি ৩.৯৭।
দলের বেশ কটি জয়ে দারুণ ভূমিকা ছিল বোলার নাসিরের। ভারতের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে শিখর ধাওয়ান ও বিরাট কোহলিকে ফিরিয়ে দলের গুরুত্বপূর্ণ ব্রেক-থ্রু এনে দিয়েছিলেন নাসিরই। ওই ম্যাচ জিতেই সিরিজ নিশ্চিত করেছিল বাংলাদেশ। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল বাংলাদেশ। সে ম্যাচেও বল হাতে নাসির ছিলেন দুর্দান্ত। ৮ ওভারে ২৬ রানে পেয়েছিলেন ৩ উইকেট।
ধীরে ধীরে দলের অপরিহার্য বোলার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করছেন নাসির, স্পষ্ট বোলিং ফিগারেই। ভারতের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে পুরো ১০ ওভার হাত ঘুরিয়েছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দুটো টি-টোয়েন্টিতেও পুরো চার ওভারের কোটা পূরণ করেছেন। তাঁর স্পিন প্রোটিয়াদের ভুগিয়েছেও। অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান নিয়মিত দিয়ে চলেছেন।
সর্বশেষ চার ইনিংসে ২ উইকেট নেওয়া তাইজুলের বদলি হিসেবে নাসিরকে দলে দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা আরেকটি কারণে। বাংলাদেশের সামনে টেস্ট সিরিজটা ড্র করার সুবর্ণ সুযোগ। টেস্টের এক নম্বর দলের বিপক্ষে সিরিজ ড্র করাতে পারলে রেটিং পয়েন্ট বেড়ে হয়ে যাবে ৪৭। এই সিরিজের আগে যেটি ছিল ৪১। বাংলাদেশ তাই আবারও আট ব্যাটসম্যানের দিকে ঝুঁকে পড়তে পারে। সে ক্ষেত্রে ওয়ানডের সিরিজ সেরা সৌম্যই হয়তো ভালো বিকল্প হতেন। কিন্তু চট্টগ্রাম টেস্টে দুর্দান্ত বোলিংয়ে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ২৪৮ রানে অলআউট করে দেওয়া বাংলাদেশ বোলিংয়েও ভারসাম্য হারাতে চায় না।
এ কারণেই সৌম্যর বদলে নাসিরের ভালো সুযোগ আছে। কিন্তু ওই ভারসাম্যের প্রশ্নেই ‘খারাপ করলেই ছেঁটে ফেলো’ নীতির বিপক্ষে টিম ম্যানেজমেন্টের একটি অংশ। দ্রুত তরবারির কোপ দেওয়ার বদলে সুযোগ দিয়ে আস্থা তৈরি করাটাই ভালো ফল দেয়, তার প্রমাণ নিকট অতীত মাহমুদউল্লাহ-তামিমরাই দিয়েছেন। পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজেই ১০ উইকেট নেওয়া তাইজুলকে তাই আস্থার সংকটে না ফেলারও পক্ষে।
তবে র‍্যাঙ্কিংয়ের সমীকরণটাই শেষ পর্যন্ত একাদশে ঢুকিয়ে দিতে পারে নাসিরকে। কিংবা সৌম্যকেও!