শুক্রবার, ৩১ জুলাই, ২০১৫

শাওলিন মঠের অধ্যক্ষের যৌন কেলেঙ্কারি ফাঁস : রয়েছে অবৈধ সন্তান, মনরঞ্জনের জন্য ভাড়া করতেন পতিতা

দেড় হাজার বছরেরও বেশি পুরোনো চীনের বিশ্ববিখ্যাত মার্শাল আর্ট কুংফু’র জন্মস্থান বলে পরিচিত শাওলিন মঠের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে বাড়ছে যৌন কেলেঙ্কারির বিস্তর অভিযোগ উঠেছে। এমনকি তার অবৈধ সন্তানও রয়েছে বলে সিএনএনসহ চীনের সংবাদ মাধ্যমগুলোতে ফলাও করে প্রচার করেছে। এ নিয়ে দেশটিতে এখন তোলপাড় চলছে।
শাওলানি মঠটি বহু পুরোনো জেন বৌদ্ধ মতবাদ ও বিশেষ মার্শাল আর্ট চর্চার জন্য বিখ্যাত। গত সপ্তাহান্তের পর থেকে শাওলিনের একজন ভেতরের ব্যাক্তি চীনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ কয়েকটি গুরুতর অভিযোগ আনেন। তার দাবি, শাওলিন মঠের অধ্যক্ষ শিং ইয়ংশিন একজন অর্থ আত্মসাৎকারী ও নারীলোভী। তার অবৈধ সন্তানও রয়েছে। এমন অভিযোগে তোলপাড় শুরু হয়েছে চীনে। এ খবর দিয়েছে সিএনএন। নিজেকে শি ঝেংয়ি হিসেবে আখ্যায়িত করা ওই ব্যাক্তি নিজের অভিযোগের সঙ্গে কিছু নথিপত্রও যুক্ত করেছেন। সেখানে দেখা যায়, ১৯৮০’র দশকের শেষের দিকে অধ্যক্ষ শি ইয়ংশিনকে চুরির অভিযোগে মঠ থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। এছাড়া তার নিজের শিক্ষকরাই তার বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ এনেছেন। শি ঝেংয়ি নিজের দাবির স্বপক্ষে অন্যান্য প্রমাণের মধ্যে হাজির করেছেন একটি জন্মসনদ। তার মতে, ওই জন্মসনদ অধ্যক্ষ শি ইয়ংশিনের এক উপপতিœর ঘরের সন্তানের। জন্মসনদের সঙ্গে শিশুটি ও তার মায়ের ছবিও রয়েছে। এমন অভিযোগ খুব দ্রুতবেগে ছড়িয়ে পড়ছে ইন্টারনেটজুড়ে। রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমও লুফে নিয়েছে এমন খবর। কারণ, চীনে শি ইয়ংশিং একজন জাতীয় মাপের তারকা। তবে শাওলিন মঠের ওয়েবসাইটে রবিবার একটি আক্রমণাত্মক বিবৃতি প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ অস্বীকার করে এসবকে ‘সাজানো’ বলে দাবি করা হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এসব মিথ্যা অভিযোগ কেবল অধ্যক্ষের সুনামহানিই করেনি, বরং গোটা মঠের ইমেজহানি হয়েছে। শি ঝেংয়ির বিরুদ্ধে একটি পুলিশে অভিযোগও দায়ের করেছে মঠ কর্তৃপক্ষ। সিএনএন বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও স্থানীয় পুলিশের কোনো বক্তব্য সংগ্রহ করতে পারেনি। শিং ঝেংয়ির সঙ্গে যোগাযোগ করাও সম্ভব হয়নি।
তবে ১৯৯৯ সালে মঠের অধ্যক্ষ হবার পর থেকেই ইয়ংশিনের পেছন থেকে অভিযোগ যেন পিছু হটছেই না। রাজনীতি বেশ ভালো বোঝেন তিনি, গণমাধ্যমের সঙ্গেও রয়েছে সখ্য। প্রায়ই বিশ্বনেতা ও শিল্পপতিদের সঙ্গে বৈঠকে ব্যস্ত সময় কাটান তিনি। বৃটেনের রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ থেকে শুরু করে অ্যাপলের প্রধান নির্বাহী টিম কুক - সবার সঙ্গেই বৈঠক হয়েছে তার। কিন্তু বিব্রতকর খবরের শিরোনাম আগেও হয়েছেন তিনি। যেমন, স্থানীয় কর্মকর্তাদের কাছ থেকে বিলাসবহুল গাড়ি ও ২৫ হাজার ডলার মূল্যমানের পোশাক গ্রহণ। গুঞ্জন রয়েছে, তিনি প্রায়ই পতিতা ভাড়া করেন, রাখেন বহু উপপতœী। তিনি শাওলিনকে একটি ব্রান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে ব্যাপক কাজ করেছেন। একে প্রতিষ্ঠা করেছেন শত-কোটি ডলারের ব্যবসা হিসেবে। তার এ প্রচেষ্টাও সমালোচনার কুড়িয়েছে। সম্প্রতি তিনি অস্ট্রেলিয়ার একটি শহরে শাওলিনের শাখা খোলার জন্য ৩০ লাখ ডলারের চেক অনুমোদন করেন। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হলে, তিনি বলেন, যদি চীন ডিজনি আমদানি করতে পারে, তাহলে কেন অন্য দেশগুলো শাওলিন আমদানি করতে পারবে না?
তবে সাম্প্রতিক অভিযোগগুলো তাকে দুর্নীতিগ্রস্থ ভিক্ষু হিসেবে চিত্রিত করেছে। এমন সময় এ ঘটনা ঘটলো, যখন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং দুর্নীতি নির্মুলে কঠোর অবস্থান গ্রহণে অঙ্গীকার ব্যাক্ত করেছেন। ১৩০ কোটি জনগণের দেশটি সরকারী কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতাদের দুর্নীতি নিয়ে অনেকদিন ধরেই ক্ষোভে ফুঁসছে। শি জিনপিং-এর ভাষায়, দুর্নীতি করলে ‘বাঘ থেকে মাছি’ পর্যন্ত কেউই নিস্তার পাবে না। প্রেসিডেন্টের এমন হুঁশিয়ারি যে স্রেফ কথার কথা নয়, তা অনেকেই টেরও পেয়েছে। হাজার হাজার উচ্চপদস্থ প্রভাবশালী সরকারী কর্মকর্তা ও কম্যুনিস্ট পার্টির নেতা ইতিমধ্যেই দুর্নীতির অভিযোগে সাজা পেয়েছেন কিংবা গ্রেপ্তার হয়েছেন। চীনের নামেমাত্র পার্লামেন্টে শি ইয়ংশিনও একজন আইনপ্রণেতা। সে হিসেবে তাকেও সরকারী কর্মকর্তা হিসেবে ধরা যায়। তবে সারাদেশের গণমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার পরও তাকে খুব একটা শঙ্কিত মনে হচ্ছে না। চীনা প্রাচীন একটি নীতিবাক্যকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, আমি কোনো অপরাধ করিনি। তাই দরজায় কড়া নাড়তে থাকা শয়তানের ভয়ে আমি ভীত নই।