শুক্রবার, ৩১ জুলাই, ২০১৫

মাহমুদুর রহমানের কোন অবৈধ সম্পদের হদিস পায়নি দুদক, সম্পদের হিসাব না দেয়ার মামলার রায় ১৩ আগস্ট

মাহমুদুর রহমানের কোন অবৈধ সম্পদের হদিস পায়নি দুদক। বৃহস্পতিবার আদালতে শুনানিকালে একথা স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন তার আইনজীবীরা। ঢাকার আলিয়া মাদরাসা মাঠে স্থাপিত বিশেষ জজ আদালত-৩ এ শুনানিকালে তার আ্ইনজীবীরা বলেন, আইনে আছে প্রাথমিক অনুসন্ধানে কারও অবৈধ সম্পদের হদিস পেয়ে রিপোর্ট দিলে সেটা বিবেচনায় নিয়ে সম্পদের হিসাব দেয়ার নোটিশ দিতে পারে দুদক। কিন্তু আদালতে দুদকের আইনজীবী ও মাহমুদুর রহমানের মামলাল আইও কেউই বলতে পারেননি মাহমুদুর রহমানের কী অবৈধ সম্পদ আছে, যার ওপর ভিত্তি করে সস্পদের হিসাব দেয়ার নোটিশ দেয়া হয়েছে। সাক্ষী প্রদানকালে মামলার আইও ও দুদকের উপ-পরিচালক নুর আহম্মেদ স্পস্ট করেই বলেছেন ২০১০ সাল থেকে এ পর্যন্ত তদন্ত চালিয়ে মাহমুদুর রহমানের কোন অবৈধ সম্পদের হদিস তারা পাননি। তবে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।
আর দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেছেন, মাহমুদুর রহমানের অবৈধ সম্পদ আছে কিনা এটা কোন বিষয় নয়। মূল বিষয় হচ্ছে মাহমুদুর রহমান দুদকের নোটিশ পাওয়ার পরও সম্পদের হিসাব দেননি। এ জন্য তার সবোর্চ্চ সাজা দাবি করেন তিনি। আইনে সম্পদের হিসাব না দিলে ৩ বছর কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে। মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলার শুনানি বৃহস্পতিবার শেষ হয়েছে। আগামী ১৩ আগস্ট মামলার রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার ছিল শুনানীর শেষ দিন। অ্যাডভোকেট সৈয়দ মিজানুর রহমান,তাজুল ইসলাম ও ফরহাদ হোসেন নিয়ন মাহমুদুর রহমানের পক্ষে আদালতে উপস্থিতথেকে শুনানি করেন।দুদকের পক্ষে মোমলরফ হোসেন কাজল সম্পানী বক্তব্য রাখেন। মাহমুদুর রহমানের পক্ষে সৈয়দ মিজানুর রহমান শুনানিতে সমাপনী বক্তব্যের শুরুতে বলেন, দুদক আইনের সেকশন ২৬ এর ১ ধারা অনুযায়ী কোন তথ্যের ভিত্তিতে এবং কোন অভিযোগের ভিত্তিতে দুদক কমিশন বিষয়টি বিবেচনায় চিঠি দিয়েছিল সে বিষয়টি দেখতে হবে। এই প্রসিকিউশনে কমিশন তদন্ত এবং অনুসন্ধান দুটি বিষয় গুলিয়ে ফেলেছে। অনুসন্ধানের চেয়ে তদন্ত শব্দের অর্থ ব্যাপক এবং বিস্তৃত । এখানে তদন্ত ব্যবহার করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের পরে কোন ব্যক্তি অসৎ উপায়ে অর্থ উর্পাজন করেছে কিনা বা সম্পদ রয়েছে কিনা এ ধরনের সন্তুষ্টজনক কোন অনুসন্ধান রির্পোট নেই। এমনকি মাননীয় আদালত থেকে অসমাপ্ত অনুসন্ধানকে সমাপ্ত করার জন্য যে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল তা সমাপ্ত না করেই ‘ তদন্ত’ রির্পোট জমা দিয়েছে।
মামলা দায়ের করার পূর্বে কমিশনের কাছে কোন তদন্ত রির্পোট দাখিল করা হয়নি, মাননীয় আদালত জেরার সময় আ্ইও তা স্বীকার করেছেন। কোন রির্পোট যদি কমিশনের কাছে থাকে তা সন্তষ্টজনক হতে হবে। অনুসন্ধান রির্পোট পর্যন্ত অপক্ষো না করে নুর আহম্মেদকে মামলা দায়েরের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সুনির্দিষ্টভাবে বলতে হবে যে অনুসন্ধান করে মাহমুদুর রহমানের এই সম্পদ পাওয়া গেছে। যা কমিশন এই প্রসিকিউশনে বলতে পারেনি।
দীর্ঘ এত বছর ধরেও মাহমুদুর রহমানের জ্ঞাত আয় বর্হিভুত কোন সম্পদ আছে কিনা এ তথ্য কমিশনের কাছে নাই। যদি থাকতো তাহলে জ্ঞাত আয় বর্হিভুত সম্পদ থাকার অপরাধে ক্রিমিনাল কেইস আদালতে করতে পারতো কমিশণ । কিন্তু সম্পদ না পেয়ে নোটিশের জবাব কেন দেয়নি এ জন্য তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। বিষয়টা এমন হয়েছে মহামান্য আদালত যে, আপনি নামায পড়েছেন কিন্তু নামাজটা দুই রাকাত পড়ে ওঠে গেলেন কেন ? তার জবাব দিহিতা চাওয়ার মতো। কমিশনের কাছেও বিষয়টা এমন বলেই ওই নোটিশ পর্যন্তই সীমাবদ্ধ।
আদালতের কাছে এর আগে বিষয়টা পরিস্কার হয়ে গেছে যে , মাহমুদুর রহমানকে নোটিশ জারি করার পদ্ধতি ,কিভাবে অ্যাড্রেস করা হয়েছে, পোষ্ট অফিসের ঠিকানায় না দিয়ে চিঠি বিলি করা হয়েছে, অফিসের লোক না গিয়ে চাকরীবিহিন রাস্তার কোন এক লোককে দিয়ে চিঠি কিভাবে পাঠানো হয়েছে, চিঠি পাঠানো হয়েছে এক ঠিকানায়, দেয়া হয়েছে অন্য ঠিকানায়, কিভাবে অতি দ্রুততার সাথে চার্জশীট দেয়া হয়েছে, সব কিছুই একটা বড় ধরনের অস্বাভাবিকতা রয়েছে। এটা একটা খেলনা টাইপের মামলা হয়েছে।
চার্জশীটের মতো একটা গুরুত্বপূর্ণ ম্যাটারকে যেভাবে ব্যবহার করা হয়েছে , যেভাবে তড়িঘড়ি করে দাখিল করা হয়েছে তা আলাদিনের দৈত্যর পক্ষেও সম্ভব নয়। এভাবে এক দিনে মঞ্জুরি অর্ডার পাওয়া , বিবরণী টাইপ করা, আদালতের নির্ধারিত টাইমের পরে প্রসিকিউশনে জমা দেয়া , গুলশান থানায দাখিল করা আবার সন্ধ্যা ৬ টার মধ্যে অফিস ত্যাগ করা । মাত্র ২/৩ ঘন্টার মধ্যে ঢাকা শহরের মতো জায়গায় এত কাজ করার পেছনে চরম অস্বাভাবিকতাই প্রমান করে পূর্বপরিকল্পিতভাবে মামলা সাজানো হয়েছে এবং চার্জশীট দাাখিল করা হয়েছে।
মাহমুদুর রহমানের আইনজীবী বলেন, আদালতে দুদকের উপপরিচালক ওমামলার বাদী নুর আহম্মেদকে জেরা করা হয়েছিল। সেখানে বাদীর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, মাহমুদুর রহমানের জ্ঞাত আয় বর্হিভুত কোন সম্পদের অভিযোগ পেয়েছিলেন কিনা বা কেউ অভিযোগ করেছিলেন কি না ? বাদী বলেছিলেন , না। তার মানে কোন অভিযোগ তথা তথ্য ছিল না। নিজে কোন অনুসন্ধান করেছিলেন কিনা বা কোন অনুসন্ধানী রির্পোট দাখিল করেছিলেন কি না ? তিনি বলেছেন না । এমনকি তাকে অসমাপ্ত অনুসন্ধান সমাপ্ত করতে দেয়া হয়েছিল সেটাও তিনি করেননি। মামলার পূর্বে যদি অনুসন্ধানী রির্পোট থাকে তাহলে ওই প্রতিবেদনটাই যথেষ্ট।
তিনি বলেন, মাহমুদুর রহমানের এই মামলায় অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রনয়ন করেননি দাখিল ও করেনি কমিশণ।
যিনি অনুসন্ধান করেছেন বলে কমিশন দাবী করেছে , সেই জহিরুল হুদাকে জেরা করা হলো প্রথম ধাপে । তিনি আদালতে বললেন তিনি অসুস্থ কথা বলতে পারবেন না। আর এই কথাটি তিনি লিখিত বা প্রসিকিউটরের মাধ্যমে বলেননি। আদালতে দাড়িয়ে নিজের মুখে কথা বলেছেন। তিনি কিন্তু নিজের মুখেই কথা বলেছিলেন । এর পরবর্তী তারিখে তাকে ডাকা হলো , তিনি সরকারী তেল পুড়িযে , টিএ বিল নিয়ে আদালতের সামনে এসেছিলেন। অথচ তাকে গাড়ি থেকে নামানো হলো না। আদালতের অনুমতিও কেন নেয়া হলো না ? তিনি কেন সাক্ষী দিতে রাজি হলেন না ? কারন তিনি সাক্ষী দিলে সব অস্বাভাবিকতা বেরিয়ে আসতে পারতো। কার নির্দেশে কিভাবে চার্জশীট দেয়া হলো সেই সত্যটাও বেরিয়ে আসেত পারতো। ১৩৪ আ্যাক্টে বলা হয়েছে মামলায় কতগুলো সাক্ষী থাকবে তার সংখ্যা নির্ধারিত নয়। তবে আদালত ন্যায় বিচারের স্বার্থে একটা সাক্ষী নিয়েও সাজা বা খালাস দিতে পারে।
এই মামলায় ২৬ ধারায় প্রসিড করার মতো কোন এভিডেন্স মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে এস্টাব্লিস্ট করতে পারেনি কমিশন। উপ-ধারার ১- আদেশ রয়েছে কমিশনের সন্তুষ্ট ছাড়াই নোটিশ দেয়ার এখতিয়ার নেই। সেই এখতিয়ার বর্হিভ’ত কোন নোটিশের জবাব দিতে নাগরিক বাধ্য নয়। অতএব,২৬র আওতায় মাহমুদুর রহমান পড়েনা। তাই ওই নোটিশের জবাব দিতে তিনি বাধ্য নয়। কমিশনের সাথে তথ্য নেই , সুনির্দিষ্ট অভিযোগ নেই, বিবেচনা করার মতো কনক্লুসিভ আ্যাকসেপ্টবেল অনুসন্ধানী রির্পোট নেই। যিনি মামলার বাদী তিনিই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা । সাক্ষীদের জেরায় বারবার চলে এসেছে কোন অদৃশ্য শক্তির দ্বারা প্রভাবিত হয়ে মামলা তৈরী হয়েছে। সব কিছুর ভিত্তিতে এটাই প্রমানিত হয় ম্যালাফিশায় প্রসিকিউশনের মাধ্যমে মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে এই মামলা দায়ের করা হয়েছে।
দুদকেরর আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেছেন, আমাদের বক্তব্য হলো দুদক নোটিশ দিয়েছে। মাহমুদুর রহমানের আইনগত দায়িত্ব ছিল তার তার সকল সম্পদের হিসাব দিয়ে নোটিশের জবাব দেয়া। তিনি নোটিশের জবাব দেননি।তিনি অপরাধ করেছেন তার সাজা হওয়া উচিত।
বৃহস্পতিবার বিশেষ জজ আবু আহমেদ জমাদারের আদালতে মাহমদুর রহমানের আইনজীবী হিসাবে তাজুল ইসলাম ও ফরহাদ হোসেন নিয়নও উপস্থিত থেকে শুনানিতে অংশ নেন। আরও উপস্থিত ছিলেন আমার দেশ এর সৈয়দ আবদাল আহমদ, জাহেদ চৌধুরী, এম আবদুল্লাহ, বাছির জামাল,বশীর আহমদ, মাহমুদা ডলিসহ আমার দেশ পরিবারের সদস্য ও মাহমুদুর রহমানের সহকর্মী পেশাজাবীরা।