বুধবার, ৭ অক্টোবর, ২০১৫

‘এই মেয়ে, তোর সাইকেল থাকবে কিন্তু টায়ার থাকবে না, তুই থাকবি কিন্তু তোর হাওয়া থাকবে না’

ছাত্রলীগের দুই কর্মীর বিরুদ্ধে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই ছাত্রীকে অশালীন ভাষায় আক্রমণ ও যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে । এ বিষয়ে প্রতিকার ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়ে ওই দুই ছাত্রী মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর দফতরে লিখিতভাবে দুটি অভিযোগ দিয়েছেন। একই সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধ অভিযোগ কমিটির কাছেও বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা। অভিযুক্ত ওই দুই ছাত্রলীগ কর্মীরা হলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সুজন প্রামানীক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী লিটন। লিখিত অভিযোগে ওই দুই ছাত্রী উল্লেখ করেন, তারা সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের পেছনের রাস্তা দিয়ে বড় ভাইয়ের জন্মদিন পালন শেষে নিজ নিজ হলে ফিরছিলেন। রাস্তার বাম পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় ছাত্রলীগের টেন্টের সামনে তাদের দু’জনের মাঝ দিয়ে চলে যেতে চেষ্টা করে সুজন ও লিটন। এসময় ওই দুই ছাত্রী শরীরে ধাক্কা লাগার ভয়ে দ্রুত রাস্তার এক দিকে চলে যান। এসময় দুই ছাত্রলীগ কর্মী তাদের পথ রোধ করে দাঁড়িয়ে বিভিন্ন অশালীন ভাষায় কথা বলতে থাকে। এতে তাদের একজন ভয়ে ও লজ্জায় কাঁদতে শুরু করে। অপর ছাত্রী ছাত্রলীগের এসব আচরণের বিরুদ্ধে কথা বলতে গেলে তাকেও অশালীন ভাষায় বিভিন্ন কথা বলতে থাকে এবং শরীরে হাত দেওয়ার চেষ্টা করে। এসময় কিছু দূরে দাঁড়িয়ে থাকা তাদের বিভাগের বড় ভাই ও আপুরা ঘটনাস্থলে পৌঁছলে ছাত্রলীগ কর্মীরা থেমে যায়। পরে তাৎক্ষণিক বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরকে জানালে তিনি সহকারী প্রক্টর মো. সোলাইমান চৌধুরী ও পুলিশকে ঘটনাস্থলে পাঠান। তবে উপস্থিত শিক্ষার্থীরা পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ঘটনাস্থলে অভিযোগ দিলেও ওই দুই ছাত্রলীগ কর্মীকে আটক করেনি। লিখিত অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, এ ঘটনায় ওই দুই ছাত্রী নিজেদের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এ বিষয়ে তদন্ত করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার দাবি জানান তারা। অপর একটি অভিযোগে ওই ছাত্রীদের একজন উল্লেখ করেন, ওই ছাত্রী বাইসাইকেল চালিয়ে যাওয়ার সময় ছাত্রলীগ কর্মী সুজন প্রামানীক কয়েকজন ছেলে নিয়ে গত সোমবার দুপুর ১টার দিকে তার পথ রোধ করে দাঁড়ায়। ওই ছাত্রীকে সাইকেল থেকে নামিয়ে বিভিন্নভাবে অশালীন ভাষায় কথা বলতে থাকে। সুজন তার সাইকেলটি বিভিন্নভাবে চেয়েও না পাওয়ার পর তাকে বিভিন্নভাবে হুমকি দেয়। এতে তিনি ক্যাম্পাসে চলাচলে নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন বলেও অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওই ছাত্রী বলেন, ছেলেটি (সুজন) আমার সাইকেলটি নেওয়ার জন্য অনেক চেষ্টা করে। কিন্তু তা করতে না পেরে আমায় হুমকি দিয়ে বলে, ‘এই মেয়ে, তোর সাইকেল থাকবে কিন্তু টায়ার থাকবে না। তুই থাকবি কিন্তু তোর হাওয়া থাকবে না।’ তিনি আরও বলেন, আমার সাথে অশালীন আচরণের প্রতিকার ও নিরাপত্তা চেয়ে মঙ্গলবার দুপুরে বিষয়টি লিখিত আকারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরকে জানিয়েছি। সেই সাথে সন্ধ্যার ঘটনাটিও লিখিতভাবে প্রক্টর অফিসে ও বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধ অভিযোগ কমিটির কাছেও জানিয়েছি। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের কর্মী সুজন প্রামানীকের মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তার ব্যবহৃত ফোন নম্বরটি অন্য একজন ধরে বলেন, ‘সুজন দলীয় মিটিংয়ে রয়েছে। তিনি এখন কথা বলতে পারবেন না।’ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মিজানুর রহমান রানা বলেন, ছাত্রী হয়রানির বিষয়টি প্রমাণ পেলে সুজনসহ জড়িতেদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধ অভিযোগ কমিটির সভাপতি ও মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মাহবুবা কানিজ কেয়া বলেন, ‘কোন ছাত্রী যৌন হয়রানির শিকার হলে আমাদের কাছে অভিযোগ করতে পারে। তবে কোন অভিযোগ জমা হলে সে বিষয়ে তদন্তের স্বার্থে বাইরে কিছু বলি না।’