মঙ্গলবার, ৪ আগস্ট, ২০১৫

পাহাড় একটা ভালোবাসার নাম

পাহাড়ের ম​িধ্যখানে নীল পানির বগালেক, ছবি: বাবর আলী
মেঘ ছুঁয়ে দিই... পাহাড় একটা  আনন্দের নাম,উচ্ছ্বাসের নাম, পাহাড় একটা হঠাৎ পাওয়া ভালোবাসার নাম। যে পাহাড়ে চোখ বুজে মুখে মেঘের স্পর্শ পাওয়া যায়, যে পাহাড়ে দুহাত ভরে হিম হিম ঝরনার পানি খাওয়া যায়, যে পাহাড়ে মেঘের ওপরে ঘুমানো যায়, পায়ের নিচে বৃষ্টি হয়, সেই পাহাড়কে ভালো না বেসে পারা যায় না। আমরা খুব ভাগ্যবান যে আমাদের দেশেও চাইলে আমরা গাড়ি নিয়ে মেঘের ওপরে যেতে পারি, আমাদের পাহাড়েও ভরদুপুরে কম্বল গায়ে জড়িয়ে ঘুরতে পারি, আমাদের নৌকা দিয়েও পাথরের দেশে অথই জ্যোৎস্না সাগর পাড়ি দিতে পারি।    
 যে জায়গার কথা বলছি সেটা ‘মেঘ-পাহাড়ের দেশ’ বান্দরবান। এখানে সবার আগে সূর্য ওঠে, এখানের আকাশ বাংলাদেশের আর সব আকাশের চেয়ে বড়, বিশাল, উদার, অনেক কাছের...।
অনেক তো সাগর-নদী-দ্বীপ ঘুরলেন, প্রিয়জনকে নিয়ে এবারের ঈদের ছুটিটা না হয় কাটিয়ে দিন মেঘ–পাহাড়ের দেশে। এখন বর্ষাকাল, পাহাড়ে যাওয়ার জন্য এর চেয়ে উপযুক্ত সময় আর নেই। এখন পাহাড় সবুজ, এখন পাহাড়ের ঝরনাগুলোয় উথাল–পাথাল পানি, পাথুরে নদীতে জলের উচ্ছ্বাস—সব পাবেন এখন।
বান্দরবানে যে জায়গাগুলোতে যাবেন, সেগুলোর মধ্যে কয়েকটি জায়গার কথা বলি, যাঁরা নতুন বিয়ে করেছেন, তাঁরা নীলগিরি ও নীলাচল ঘুরে আসতে পারেন। নীলগিরিতে মেঘ দেখার জন্য আপনাকে খুব ভোরে সেখানে থাকতে হবে। সূর্য ওঠার আগে সাদাটে সবুজ পাহাড় দেখে হঠাৎ করেই মনে হবে আপনি একটা ধবধবে সাদা সাগরের মাঝে দাঁড়িয়ে আছেন, চারপাশে যত দূর চোখ যায়, মেঘ আর মেঘ। চাইলে যেন সকালের চায়ের সঙ্গে মেঘ মিশিয়ে খেতে পারেন। জীবনের সবচেয়ে রোমাঞ্চকর এই অভিযানের কাহিনি মনের ডায়েরিতে আপনাআপনিই আজীবনের জন্য লিপিবদ্ধ হয়ে যাবে।
যাঁরা হালকা একটু রোমাঞ্চ চান, একটু হাঁটাহাঁটির অভ্যাস আছে, তাঁরা সঙ্গীসহ হাঁচড়ে–পাঁচড়ে একটু কষ্ট করে উঠে যান বগালেকে। চারপাশে পাহাড়ঘেরা বিশাল লেকের পাড়ে বসে আরামসে কাটিয়ে দিতে পারবেন সারা বিকেল, রাত। সকালে যখন ঘুম থেকে উঠবেন, তখন ফুঁ দিয়ে মেঘ সরাতে হবে দরজা, জানালা থেকে। হাজার বছর ধরে না নড়া আয়েশি পাহাড় নিমেষেই আপনাকে আরও আয়েশি বানিয়ে দেবে। এক কাপ চা হাতে যখন বারান্দায় এসে দাঁড়াবেন, তখন দেখবেন ধোঁয়া আর মেঘ মিলেমিশে একাকার।
আপনার এবারের ঈদ হোক পাহাড়ে, এবারের ভালোবাসাটুকু হোক পাহাড়ের সঙ্গে একান্ত প্রিয়জনকে নিয়ে। দু-তিন দিনের ছুটি কাটিয়ে যখন সভ্যতা নামক যন্ত্রনগরে প্রবেশ করবেন, তখন বারবার মনে হবে জীবনের সবচেয়ে সেরা সময়টা মাত্রই কাটিয়ে এলেন, কাজের ফাঁকে ফাঁকে আপন মনেই মুখ ফসকে বেরিয়ে আসব—আহা রে, কবে যাব পাহাড়ে...।