মঙ্গলবার, ১৮ আগস্ট, ২০১৫

চাঁদাবঞ্চিত হয়ে শিক্ষার্থীদের পেটালো যুবলীগ

শোক দিবসের অনুষ্ঠান করার জন্য চাঁদা দিতে হবে। এ দাবি নিয়ে চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার ভূঁইয়ারা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাছে এসেছিলেন যুবলীগের কয়েকজন কর্মী। শিক্ষকরা সেই দাবি না রাখায় এক শিক্ষককে লাঞ্ছিত
করেন তারা। এ ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা মিছিল বের করলে তাদের ওপর হামলা চালায় যুবলীগ কর্মীরা। এতে আহত হয় কমপক্ষে ৪০ জন। ২০ জনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ১৩ জন মেয়ে ও ৭ জন ছেলে। সকাল ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। ভূঁইয়ারা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দুলাল চন্দ্র সরকার বলেন, যুবলীগ কর্মী ফারুক, লিটন ও মনিরসহ একদল যুবক শুক্রবার রাতে বিদ্যালয়ে এসে ১৫ই আগস্টের অনুষ্ঠান করার জন্য ১৫ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। তারা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য আসা উপবৃত্তির টাকা থেকে এ টাকা দাবি করেন। সে রাতে তারা হুমকি দিয়ে চলে যান। পরদিন শনিবার দুপুরে ফের টাকা নিতে আসে তারা। আবারও চাঁদার জন্য চাপ দেয়। চাঁদা না দেয়ায় যুবলীগের ওই কর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে প্রধান শিক্ষককে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। প্রধান শিক্ষককে বাঁচাতে গিয়ে লাঞ্ছিত হন বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও হোস্টেল সুপার ফজলুর রহমানও। গতকাল সকালে বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা এসে ওই ঘটনা জানতে পেরে এর প্রতিবাদে এবং সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন করে বিক্ষোভ করতে থাকে। এ সময় ১৫/১৬ জন যুবক লাঠিসোটা নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। তাদের হামলায় অন্তত ৫০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়। পরে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা হামলাকারীদের বাড়িঘর ভাঙচুর করে। হামলা চালিয়ে যুবকরা তাৎক্ষণিক এলাকা ছেড়ে চলে যায়। হামলায় গুরুতর আহতরা হলো- বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মুন্নি আক্তার, বিউটি আক্তার, শাবনুর, আরিফ হোসেন, পাখি আক্তার, সুজন, ৯ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী রিয়াদ হোসেন, ৮ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী সোনিয়া আক্তার, তানিয়া, পপি আক্তার, রিপা আক্তার, খাদিজা আক্তার বৃষ্টি, ৭ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী শাকিলা আক্তার, সায়মা আক্তার, ৬ষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থী তানজিলা আক্তার, মীম প্রমুখ। ওদিকে হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, আহতদের মধ্যে ৮ম শ্রেণীর ছাত্রী তানিয়া আক্তারকে আশংকা জনক অবস্থায় কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
কচুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইব্রাহিম খলিল ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি।
কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক বিজয় দত্ত বলেন, আহত শিক্ষার্থীদের মধ্যে গুরুতর আহত ২০ জনকে ভর্তি রাখা হয়েছে। আহত অন্য শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। কচুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ব্যাপারে কচুয়া যুবলীগের সভাপতি নাজমুল আলম স্বপন বলেন, যারা এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে তারা যুবলীগ কর্মী নয়, তারা সন্ত্রাসী। তাদের বিরুদ্ধে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিতে পুলিশকে বলেছি।
চাঁদপুর পুলিশ সুপার সামছুন নাহার বলেন, এ ঘটনায় দুলাল চন্দ্র সরকার মামলা দায়ের করেছেন। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে।