উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের
উপকূলীয় এলাকায় সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিচ্ছে। উপকূলীয় এলাকায়
ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টি হচ্ছে। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ৭
নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৫
নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
ঢাকা অফিসের আবহাওয়াবিদ রুহুল কুদ্দুস আজ বুধবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে প্রথম আলোকে এ তথ্য জানান।
কক্সবাজার
থেকে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, কক্সবাজার সদর, কুতুবদিয়া, মহেশখালী,
উখিয়া, টেকনাফ, চকরিয়া, পেকুয়াসহ উপকূলীয় বিভিন্ন এলাকায় লোকজনকে সরিয়ে
নিতে মাইকিং করা হচ্ছে। রাত ১১টা পর্যন্ত প্রায় ৫-৬ হাজার লোককে ঘূর্ণিঝড়
আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসক (ভারপ্রাপ্ত) অনুপম
সাহা রাত ১০টার দিকে জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
কমিটির জরুরি সভা হয়েছে। সেখান থেকে জেলার সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের
মাইকিং করার জন্য বলা হয়েছে। এরপরই সব উপজেলায় মাইকিং করে লোকজনকে আশ্রয়
কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
এ ব্যাপারে রাত সোয়া ১১টার দিকে সেন্ট
মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আমিন প্রথম আলোকে জানান, সেখানে
এখন ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি হচ্ছে। সাগর উত্তাল রয়েছে, লোককে তিনটি আশ্রয়
কেন্দ্রে সরিয়ে আনা হয়েছে।
এর আগে পতেঙ্গা আবহাওয়া দপ্তর জানায়, গভীর
নিম্নচাপটি আজ বুধবার সন্ধ্যা ছয়টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১৪০
কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১২৫ কিলোমিটার
দক্ষিণ-পশ্চিমে, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে এবং
পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থান করছিল।
এটি
আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে কাল বৃহস্পতিবার দুপুর কিংবা বিকেল
নাগাদ বরিশাল ও চট্টগ্রামের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করতে পারে বলে
জানান পতেঙ্গা আবহাওয়া দপ্তরের কর্তব্যরত আবহাওয়াবিদ নিলুফার জাহান।
গভীর
নিম্নচাপের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর এবং তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয়
এলাকা এবং সমুদ্র বন্দর সমূহের ওপর দিয়ে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
নিম্নচাপ
কেন্দ্রের ৪৮ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৫০
কিলোমিটার যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়া আকারে ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি
পাচ্ছে। নিম্নচাপ কেন্দ্রের নিকটে সাগর উত্তাল রয়েছে।
চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে চার নম্বরের পরিবর্তে সাত নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
গভীর
নিম্নচাপের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী,
লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, ভোলা, বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, ঝালকাঠি,
পিরোজপুর, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও
চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৩ থেকে ৪ ফুট অধিক উচ্চতার
বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
এ ছাড়া নিম্নচাপটি উপকূল
অতিক্রমের সময় ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে বলে জানান আবহাওয়াবিদেরা।
এর প্রভাবে চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড়ি অঞ্চলের কোথাও কোথাও ভূমি ধসের
আশঙ্কাও রয়েছে।
উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলার এবং
সমুদ্রগামী জাহাজসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে
থাকতে বলা হয়েছে।