বুধবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

আইএস ধাঁচে অভিযান, কুনদুজ তালেবানের দখলে

 
তালেবান জঙ্গিরা আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলীয় প্রাদেশিক শহর কুনদুজ দখল করার পর তা পুনর্দখলের জন্য অবস্থান নিচ্ছে আফগান সেনারা। ছবিটি গতকাল মঙ্গলবার তোলা। ছবি: রয়টার্স
জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস‍) হামলার অনুকরণে আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলীয় প্রাদেশিক শহর কুনদুজ গত সোমবার দখল করে নিয়েছে তালেবান জঙ্গিরা। এটা সে দেশের নিরাপত্তা বাহিনির ওপর একটি বড় ধরনের আঘাত বলে মনে করা হচ্ছে।
এটি ২০০১ সালে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে তালেবানের সবচেয়ে বড় সাফল্যগুলোর একটি। তালেবানের ছোট একটি বাহিনির কাছে কোটি কোটি ডলার ব্যয়ে প্রশিক্ষিত ও আধুনিক সামরিক সরঞ্জামে সজ্জিত আফগান সেনাদের এই কুপোকাত হওয়ার ঘটনায় অনেকে বিস্মিত।
মার্কিন বিমানবাহিনীর সহায়তা থাকার পরও দেশটির সেনাবাহিনীর কাছ থেকে কৌশলগত ভাবে কুনদুজ দখল করে নেয় তালেবান জঙ্গিরা। তবে কুনদুজ পুনর্দখলের লক্ষ্যে গতকাল মঙ্গলবার থেকে পাল্টা হামলা শুরু করেছে আফগান সেনারা। গত বছর আইএস যে কায়দায় ইরাকের মসুল শহরটি দখল করে নিয়েছিল ঠিক একই কায়দায় কুনদুজ দখল করে তালেবান জঙ্গিরা।
আজ বুধবার বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আফগানিস্তানে পশ্চিমা-মদদপুষ্ট নিরাপত্তা বাহিনীকে কোটি কোটি ডলার খরচ করে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, তাঁদের জন্য ভারী অস্ত্র কেনা হয়েছে। এরপরও তাঁদের কৌশলে পরাজিত করে কুনদুজ দখল নেয় তালেবান জঙ্গিরা। এত কিছুর পরও এই পরাজয়ের জন্য দেশটির সরকারের নেতৃত্বকেই দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা।
নিউইয়র্ক-ভিত্তিক গোয়েন্দা সংস্থা স্পেশাল প্রজেক্ট ফর দ্য সোফান গ্রুপ ইন্টেলিজেন্স কনসালটেন্সির পরিচালক প্যাট্রিক স্কিনার বলেন, ‘গত বছর মসুলের হামলা আর কুনদুজের হামলা একটা সমান্তরাল ঘটনা। এটা সত্যিই অস্বাভাবিক ব্যাপার। গত এক দশক ধরে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে সেনাবাহিনীকে দক্ষ করে তোলা হয়েছে। তারপরও তারা কুনদুজ রক্ষা করতে পারেনি। গত বছর মসুলেও একই ঘটনা ঘটেছিল। মসুল ও কুনদুজে হামলার কায়দাটা একই ধাঁচের।’
আইএস গত বছরের জুনে ইরাকের মসুল দখল করার পর সেখানকার নিরাপত্তাবাহিনী তা পুনর্দখলের জন্য উঠেপড়ে লাগলেও শহরটি এখনো আইএসের দখলেই আছে। এদিকে কুনদুজ পুনর্দখলের লক্ষ্যে গতকাল থেকে আফগান সেনারা পাল্টা হামলা শুরু করলেও তা এখনো দখল নিতে পারেনি।
সেনাবাহিনী বিশেষজ্ঞ ও জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক স্টিফেন বিডল বলেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো কুনদুজ ও মসুল দখলের কায়দাটা একদম একই ধরনের। নিরাপত্তাবাহিনীতে অনেক বছর ধরে দুর্নীতি হওয়ায় এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে। তিনি বলেন, সেনাবাহিনীর চেইন অব কমান্ড যখন রাজনৈতিকভাবে ব্যবহৃত হয় বা দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে তখন তাঁদের সঠিকভাবে কাজ করাটা দুরূহ হয়ে যায়।’
পাকিস্তানের সাংবাদিক ও তালেবান বিশেষজ্ঞ আহমেদ রশিদ বলেন, তালেবান বিদ্রোহীদের কুনদুজ দখলের সময় তাঁরা ছিলেন সংখ্যায় মাত্র এক হাজার সদস্য। অথচ তাঁদের বিপক্ষে পাঁচ হাজার থেকে সাত হাজার আফগান সেনা থাকা সত্ত্বেও সেনারা কুনদুজ রক্ষা করতে পারেনি। দেশটির সরকার সংগঠিত নয় এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে বিশৃঙ্খলার কারণেই এমনটা ঘটেছে। একটা শহরকে রক্ষা করার মতো কোনো ক্ষমতা তাঁদের নেই। দেশটিতে রাজনৈতিক নেতৃত্ব খুবই দুর্বল।’
তবে পেন্টাগনের প্রেস সচিব পিটার কুক মসুল ও কুনদুজের ঘটনা দুটিকে এক বলতে নারাজ। তিনি বলেন, ‘দুটি দুই ঘটনা। ঘটনা দুটিকে সরাসরি তুলনা করা ঠিক নয়। কারণ দুই ঘটনার পরিস্থিতি ও হামলাকারী আলাদা আলাদা।’
কাবুল-ভিত্তিক সেনাবাহিনীর বিশেষজ্ঞ জায়িদ কোহিস্তানি বলেন, আইএস জঙ্গি মসুল দখল করার পর থেকেই তা ইরাকের অন্যান্য শহরগুলোর জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। কুনদুজ পুরো শহর এখনো নিয়ন্ত্রণে নিতে পারেনি তালেবান। এ ছাড়া এ ঘটনার কারণে কুনদুজ প্রদেশের পার্শ্ববর্তী এলাকা এখনো হুমকির সম্মুখীনও হয়নি।’